ক্যান্সারের ওষুধ হিসেবে রোগীকে দেয়া হয় গোলাপ জল। তাও একটি, দুটি নয় ১০৭টি। ভণ্ড কবিরাজের এমন বিচিত্র চিকিৎসার গ্যাড়াকলে পড়ে রোগী ৬০টি গোলাপ জল খেয়ে অবশিষ্টগুলো না খাওয়ার অপরাধে করা হয় মারধর। এতেই মৃত্যু হয়েছে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর।
সোমবার সন্ধ্যায় বিচিত্র এ অপচিকিৎসার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের ছাতাড্ডা গ্রামে। ভণ্ড কবিরাজের এহেন চিকিৎসায় নিহত হন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর নাম শামীম খান (৪৫)। শামীম খান চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার পাঁচঘরিয়া গ্রামের মাহবুব খানের ছেলে। কথিত জিনের বাদশা ও ভণ্ড কবিরাজ আবুল কামাল চান্দিনা উপজেলার ছাতাড্ডা গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবারের লোকজন জানান, শামীম খান দীর্ঘদিন যাবৎ ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসাও নিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে চান্দিনার ছাতাড্ডা গ্রামের কথিত জিনের বাদশাখ্যাত কবিরাজ আবুল কালামের নিকট আসেন। শামীম ও তার পরিবারের নিকট খবর ছিল- ওই জিনের বাদশা ক্যান্সারসহ সব রোগের চিকিৎসা করান। রোগীরা ভালোও হয়ে যান।
সোমবার সেখানে আসার পর ক্যান্সার আক্রান্ত শামীমকে ১০৭টি গোলাপ জল এবং ৮টি গামছা আনার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কবিরাজের নির্দেশে আনা হয় ১০৭টি গোলাপ জল। এবার খাওয়ার পালা। একে একে কবিরাজ আবুল কালামের উপস্থতিতে তিনি (শামীম) ৬০টি গোলাপ জল খাওয়ার পর কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় ওই ভণ্ড কবিরাজ সবগুলো গোলাপ জল খেতে তাকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে রোগী শামীম অচেতন হয়ে পড়ে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা গণধোলাই দেয় ওই ভণ্ড কবিরাজকে। খবর পেয়ে রাত সোয়া ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার এবং ভণ্ড কবিরাজ আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. মজিবুর রহমান জানান, ক্যান্সার চিকিৎসায় বাংলাদেশের সফলতা অনেক, কিন্তু মানুষ এখনো এতটা অজ্ঞ হয় কীভাবে? গোলাপ জলে ক্যান্সার ভালো হওয়ার মতো কোনো উপাদান চিকিৎসাশাস্ত্রে আছে বলে আমার জানা নেই।
রাতে চান্দিনা থানার ওসি মুহাম্মদ শামছুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার এবং ভণ্ড কবিরাজ ওই জিনের বাদশাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
মঙ্গলবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থানায় মামলা দায়ের করেছে।